বগুড়া জেলার পর্যটন অঞ্চল দর্শনীয় স্থান সমূহ
বাবা আদমের মাজার ও আদমদিঘীর প্রখ্যাত দিঘী
১৩শ শতাব্দীর পূর্বে আদমদীঘি নামে কোন শহরের অস্তিত্ব ছিল না। সে সময় বঙ্গ দেশের এ অঞ্চল শাসন করতেন রাজা দ্বিতীয় বল্লাল সেন। তর রাজধানী ছিল ঢাকার বিক্রমপুর। রাজার শাসন আমলে নিম্ন বর্ণের হিন্দু, মুসলিম ও খিষ্টানেরা নির্যাতিত হত। ওই সময় আরাকান রাজ্য হতে বাবা আদম (র:) ১২ জন শিষ্য নিয়ে এই এলাকায় এসে। আদমদীঘিতে আস্থানা গড়ে তোলে তার শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শাহ তুরকান, শির মোকাম, শাহ বন্দেগী, শাহ জালাল, শাহ ফরমান ও শাহ আরেফিন। বাবা আদম (র:) এর শিষ্যদের সুন্দর আচরনে অল্পদিনের মধ্যে স্থানীয় জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সে সময়ের হিন্দু প্রধান এলাকা থেকে0 দলে দলে লোকজন ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বগুড়া জেলার শিরপুর হয়ে যমুনা নদী পর্যন্ত বাবা আদম (র:) এর প্রভাব সৃষ্টি হয়। এ সময় আদমদীঘির জনসাধারন খাবার পানির সংকটে ভুগছিলেন। বাবা আদম (র:) এর ডাকে হাজার হাজার হিন্দু; মুসলিম এসে আদমদীঘি থানার পাশ্বে একটি দিঘি খনন করেন। এবং ওই দিঘির পানি দ্বারা এলাকার জল কষ্ট নিবারন হয়। সে সময় এলাকাবাসী বাবা আদম (র:) এর প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ জায়গাটির নামকরন করেন আদমদীঘি। সেই থেকে দেশের মানচিত্রে উঠে আসে আদমদীঘি। পরবর্তীতে রাজা বল্লাল সেনদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যুদ্ধে বাবা আদম (র:) শত্রুর আঘাতে আহত হন। আহত অবস্থায় তার নির্দেশে তাকে আদমদীঘিতে নিয়ে আসা হয়। এবং তার কিছুক্ষনের মধ্যে আদমদীঘিতে তার মৃত্যু ঘটে। তার অছিয়ত মতে তাকে খনন কৃত দিঘির দক্ষিন পাড়ে কবর দেওয়া হয়। সেই থেকে এটি আদম বাবার মাজার নামে পরি।
কিভাবে যাওয়া যায়:
বগুড়া শহর হতে সিএনজি, বাস, মাইক্রোবাস, অটোরিক্সাযোগে এবং নওগাঁ জেলা হতে সিএন,জি, বাস, মাইক্রোবাস, অটোরিক্সাযোগে এই দিঘীর পাডে যাওয়া যায়। দিঘীটি আদমদীঘি সদর ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে।
মহাস্থানগড়
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কি.মি উত্তরে মহাস্থান গড় অবস্থিত।
ইতিহাস
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন (১০৮২-১১২৫) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল । মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীল এর সাথে। এসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে অসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে। কারণ তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনিই এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং রাজা হন। এই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। ইতিহাসে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত। কথিত আছে পরশুরামের সাথে ফকির বেশী আধ্যাত্মিক শক্তিধারী দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর যুদ্ধ হয়। (১২০৫-১২২০) যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।
দর্শনীয় স্থান
মহাস্থান গড় বাংলাদেশের একটি প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র। এখানে মাজার জিয়ারত করতে এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বহু লোক সমাগম ঘটে। এখানকার দানবাক্সে সংরক্ষিত অর্থের পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৭০ হাজার টাকা যা মাজার মসজিদের কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
মাজার শরীফ
মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছু পশ্চিমে হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর মাজার শরীফ অবস্থিত। কথিত আছে মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। কথিত আছে হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাহী সওয়ারেরর আগমন ঘটে।
শীলাদেবীর ঘাট
গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে ‘শীলাদেবীর ঘাট’। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে।
জিউৎকুন্ড
এই ঘাটের পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ আছে। কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত।
মিউজিয়াম
মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
বেহুলার বাসর ঘর
মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি বাথরুম ।এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই বেশি পরিচিত।
কিভাবে যাওয়া যায়:
বগুড়া সাতমাথা হতে সিএনজি যোগে ১৫ কিমি উত্তরে।
ঐতিহাসিক যোগীর ভবনের মন্দির
কাহালু উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিঃমিঃ উত্তরে পাইকড় ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ঐতিহাসিক যোগীর ভবন অবস্থিত। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যোগী ও সাধু-সন্নাসীদের আনা-গোনা ছিল বলে এ স্থানটির নামকরণ ‘‘যোগীর ভবন’’ বলে স্থানীয়ভাবে জানা যায়। এখানে রয়েছে একটি আশ্রম, ০৪ টি মন্দির, কানচ কূপ, একটি ইঁদারা, ধর্মটঙ্গী এবং অগ্নিকুন্ড ঘর। যোগীর ভবনের আশ্রম ও মন্দির নির্মানের তেমন কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও এখানে বিভিন্ন দেয়ালের গায়ে ৮৮৪, ১১১৩, ১১১৯ খৃষ্টাব্দ লেখা রয়েছে যা থেকে অনুমান করা যায় যে, এটি ৮৮৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ১১১৩, ১১১৯ খৃষ্টাব্দে এটির সম্ভবতঃ সংস্কার করা হয়েছিল। জনশ্রুতিতে আরোও জানা যায় বাংলার কিংবদন্তী নায়িকা বেহুলার মৃত স্বামী লক্ষ্ণীন্দর এখানকার কানচ কূপের পানির মাধ্যমে জীবন ফিরে পেয়ে ছিলেন। যোগীর ভবন মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পূজা-পার্বণ করে থাকেন। সংস্কারের অভাবে এখন এটি ধবংসের পথে।
কিভাবে যাওয়া যায়:
পাঁচপীর মাজার কাহালু
পাঁচপীর মাজার কাহালু উপজেলার ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত। পাঁচ জন পীর বা অলি একই স্থানে শায়িত আছেন বলে স্থানটির নামকরণ হয়েছে ‘‘পাঁচপীর’’। মাজারটি উঁচু একটি ঢিবির উপর অবস্থিত। তবে সম্রাট আকবরের শাসনকালে থেকে স্থানটি ‘‘পাঁচপীর মাজার’’ নাম ধারন করে আসছে বলে জনশ্রুতিতে জানা যায়। ১৯৫২ সালে মাজার এলাকা সমতল করার সময় ইট দ্বারা বাধানো ০৫ (পাঁচ) টি কবর আবিস্কৃত হয়। ঐ এলাকার এক ব্যক্তি মাজার এলাকা সমতল করার দিনগত রাতে স্বপ্নে উক্ত স্থানে ০৫ (পাঁচ) জন পীরের মাজার দেখতে পান বলে এলাকাবাসী নিকট থেকে জানা যায়।
ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১৩৩৪ খৃষ্টাব্দে আব্দুল আজিজ (রহঃ) নামের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির নেতৃত্বে ইসলাম প্রচারে জন্য ০৭ (সাত) সদস্যের একটি দল প্রথমে এদেশে আগমন করেন। পরবর্তীতে নুর উদ্দীন ইয়ামিন (রহঃ) এর নেতৃত্বে ০৫ (পাঁচ) সদস্যের একটি দল এ উপজেলায় প্রেরণ করা হয়। তারা উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামে এসে আশ্রয় গ্রহন করেন এবং এখান থেকে সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচার কার্যক্রম শুরু করেন। তারা এখানেই ইন্তেকাল করে বলে জনশ্রুতিতে জানা যায়।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায় যে, ১৩০০ খৃষ্টাব্দে সুদূর বাগদাদ (ইরাক) থেকে ০৫ (পাঁচ) জন পীরের প্রধান পীরজাদা মোঃ আহমদল্লাহ (রহঃ) প্রথমে মাজারের ১ কিঃমিঃ পশ্চিমে ফকিরপাড়া গ্রামের পাশে দরগাতলা নামক স্থানে একটি পাকুড় গাছের মাথায় লাল ঝান্ডা (পতাকা) দিয়ে তার নীচে আস্তানা গড়েন। কিছুদিন পর তার অপর ০৪ (চার) সঙ্গী ঝান্ডা দেখে সেখানে সমবেত হয়ে সম্মিলিতভাবে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তৎকালীন ঐ এলাকার প্রতাপশালী এক জমিদার ইসলাম প্রচারে বাধা দিলে পীরগণ এলাকার মুসলমানদের সহযোগিতায় জমিদারকে বিতাড়িত করে মাজার এলাকায় তার কাচারী বাড়ী দখল করে সেখান থেকে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। পরবর্তীকালে পীরগণ ইন্তেকাল করলে এলাকার ভক্তগণ পর্যায়ক্রমে তাদের পাঁচপীর মাজার নামক স্থানে কবরস্থ করা হয় বলে এ নামকরণ হয়েছে ‘‘পাঁচপীর মাজার’’। তবে পীরগণের নাম ও তাদের আগমন সম্পর্কে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সুত্রে আরো জানা যায় ১৯৬৮ সালে পীরজাদা মাওঃ মোহাম্মাদী ফরিদি তার একজন মুরিদকে নিয়ে এ মাজার শরীফে মোরাকাবা ও মুশাহেদী করে পীরগণেরনাম জানতে পারেন। এরা হলেন পীরজাদা মোঃ আহমদল্লাহ (প্রধান), পীরজাদা মোঃ আব্দুল গফুর, পীরজাদা মোঃ আব্দুস সামাদ ও পীরজাদা মোঃ আব্দুর রহমান। বর্তমানে এখানে একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা ও রেল ষ্টেশন রয়েছে এবং প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষে এখানে ০৩ (তিন) দিনব্যাপী ওরশ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বেহুলা লক্ষিণদ্বর (গোকুল মেধ)
বগরা খাঁর নাম অনুসারে বগুড়া সদর উপজেলার নাম। উত্তর বংগের একটি প্রাচীন জনপদ। করতোয়া নদীর সংলগ্ন যে ভূমিটি ছোট জনপদ। ব্যবসা বানিজ্যিরের তীর্থকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সদর উপজেলা হিন্দু আমল, সুলতানী আমল, নবাবী আমল, বিটিশ আমল ও পাকিস্তান আমল পেরীয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত সদর উপজেলার ইতিহাস-বৈচিত্র্যের ইতিহাস, বহু শাসকের উথান-পতনের ইতিহাস, অত্যাচার, শুশনের ইতিহাস সব মিলিয়ে সদর উপজেলার ইতিহাস ঐতিহাসিক ভূমিকা অনির্বায ভাবে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অবিচচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাড়াই। এ বিশাল ইতিহাসের পরিধীতে করতোয়া স্রত সদর উপজেলা ভূমিতে জম্মগ্রহণ করেছেন প্রোথিতযশা অনেক কবি সাহিত্যিক তাঁদের রচনা কর্মে একদিকে যেমন এ উপজেলার গৌরবময় ভূমিকাকে উজ্জল করেছে, তেমনি এদেশের সাহিত্যিাঙ্গনকে করেছে গতিশীল ও সমৃদ্ধ। শুধু তাই নয়, উপজেলার প্রাচীন কালে কবি সাহিত্যিকদের রচনাবলীর দ্বারা যেমন আমরা আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে বার বার ফিরে পাই। তেমনি আধুনিক কালে কবি-সাহিত্যিকদের রচনাবলী দেশের তথা সাহিত্যের বিশ্ব-ইতিহাস অনুসন্ধানে আমাদেরকে অনুপ্রাণীত করে। অতিত ও বর্তমানে এ মহামিলনের মধ্যে সেতু রচনা করতে আমরা যদি ব্যর্থ হই তাহলে আমাদের সকল ইতিহাস একদিন বিস্মৃতির অন্ধকারে নিমির্জ্জিত হবে। ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার প্রয়োজন এ কথা শুধু মুখে বলেই হবে না। সঠিক ইতিহাস রচনার মাধ্যমে তাকে বাচিয়ে রাখতে হবে। বিকৃত ইতিহাসের মধ্যে নয়।
মধ্যে যোগের কবিদের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেন লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের কবি জীবনকৃঞ্চ মৈত্র। তিনি বাংলা সাহিত্যির ইতিহাসে মনসা মঙ্গলের কবি হিসাবে পরিচিত। জীবন কৃঞ্চ মৈত্রের কাব্যেবের নাম ‘‘ পদ্ম পুরন’’, এতে চাঁদসওদাগর মনসা, বেহুলা লক্ষিদরের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। কবিতার বংশ পরিচয় দিয়েছেন এভাবে শ্রী বংশীবদন মৈত্র নাম মহাশয় চৌধুরী অনন্তরায় তাহার তয়ন/অনন্তনন্দন কবি শ্রী মৈত্র জীবন/লাহিড়ীপাড়াতে বরেন্দ্র ব্রাক্ষ্মণ, তিনি পাগল জীবন নামে পরিচিত ছিলেন। নিজস্ব কাব্য প্রতিভার দ্বারা জীবন মৈত্র সাহিত্যিতের ইতিহাসে নিজের স্থান করে নিয়েছেন। সে গৌরবের অংশিদার এ উপজেলা বাসীও। ডাঃ কহরউল্লাহ পেশায় ছিলেন হোমিও প্যাথিক চিকিৎসক। তাঁর জন্ম স্থান গোকুলের রামশহরে। তিনি ‘‘মহাস্থান’’ নামে যে ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখেছেন তাতে মহাস্থান গড়ে ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞ্যাত হওয়া যায়।
বিটিশ আমলে মধ্যভাগে সদর উপজেলায় বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ প্যারীশঙ্কর দাস গুপ্ত প্রায় ১৮টি গ্রন্থ রচনা করেন। সামাজিক উপনাস, ধর্মীগ্রন্থ এবং চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ অন্যতম। তিনি ১৯৫৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৯৩১ সালে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর গ্রন্থ গুলোর নাম আর্য-বিধবা, কমলিনি, ফুল ও মুকুল, প্রতাপসিং, যমুনা, রত্নকার, গ্রাসী, কর্ণ, লক্ষী, অর্জুন, প্রহলাদ, উষা, প্রসাদ, গীতা ও কুঠির, কৃঞ্চাশ্রম, সংগ্রামসিং, স্ত্রীশিক্ষা, রাধা চিকিৎসা বই-ওলাওঠা। দত্তবাড়ীর মোড় থেকে নামাজগড় মোড় পর্যন্ত পশ্চিম মূখী রাস্তাটি তাঁর নামানুসারে ডাঃ প্যারীশঙ্কর স্ট্রিট নামে পরিচিত।
শুজাত আলী শেখেরকোলা ইউনিয়নের তেলিহারা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর লিখা শিশু তোষ গ্রন্থ, চাঁদের হাট এ সময়ে সদর উপজেলায় ২জন কবি খ্যাতি অর্জন করেন তাঁরা হলেন কবি রোস্তম আলী কর্ণপুরী এবং কবি কে.এম সমসের আলী। কবি কর্ণপুরী আমৃত্যু সাহিত্যকে ভালো বেসে গেছেন। কোন সাহিত্যি সভায় ডাক পড়লে শুদুর গ্রাম কর্ণপুর থেকে পায়ে হেটে চলে আসতেন। সদর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামে এ মানুষটি কাব্য ভাষায় নিজেকে উজাড় করে দেন। খেলাফত ও কংগ্রোস আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ‘‘ বিশ্ব নবী’’ বগুড়ার ফুলমাঞ্চ’’ সোহরাব-রোস্তম সহ অনেক গ্রন্থ রচিতা তিনি। সোহরাব-রোস্তম কাব্যখানি অমৃত্রিাক্ষর ছন্দে রচিত। তাঁর কবির তার মধ্যে নজরুলের প্রভাব বিদ্যমান। রবিন্দ্র নাথ প্রভাবিত আরেক কবি কে. এম সমসের আলী এ উপজেলার মন্ডলধরন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ছাত্রাবস্থায় থেকে তিনি কাব্য রচনার প্রয়াস পান। তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘‘ আলিঙ্গন’’ ছাত্র জীবনে প্রকাশ পায়। ‘‘ স্বাক্ষর’’ সনেট গ্রন্থ এবং অল্প সময়ে তিনি ‘‘ সনেট বিশারদ’’ হিসাবে সারা দেশে শুনাম অর্জন করেন। ‘‘ কল্লোল’’ আর একটি সনেট সংকলন। আধুনিক কবিতা, যাকে অনেকে গদ্য-কবিতা বলে আখ্যায়িত করেন। সেই গদ্য কবিতা লিখার প্রচেষ্টার স্বাক্ষর তাঁর আর একটি গ্রন্থ ‘‘রমনার কবি’’। তিনি কাব্যে একটি নিবেদিত প্রাণ কবি ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালে ১৭ এপ্রিল পরলোক গমন করেন। তিনি বাংলা একাডেমীর পুরস্কার ও লাভ করেন।
রমেনা আফাজ ১৯২৬ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। মুরত ‘‘ দস্যুবনহুর’’ সিরিজ কাহিনী লিখে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু উপনাস রচনাতেও তাঁর ছিল সমান দক্ষতা। ‘‘ বনহুর সিরিজের মোট সংখ্যা ১৩২টি। ‘‘দস্যুরানী সিরিজ ১২টি। উপনাসের সংখ্যা ৬০টি। ‘‘ কাগজের নৌকাসহ প্রায় ৬টি উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। ‘‘ মান্দীগড়ের বাড়ী নামক একটি কিশোর উপন্যাসও তিনি লিখে ছিলেন। সাহিত্যতে নিবেদিত প্রাণ রমেনা আফাজ ২০৩ সালে লোকান্তরিত হন।
তাজমিলুর রহমানের জন্ম ১৯২৫ সালে। তিনি নাট্যকার হিসাবে সুপরিচিত। তাঁর রচিত কয়েকটি নাটকের মধ্যে অন্যতম কলির জিন, ভাই, রুপচাঁন, সুবেহ, উম্মিদ, কারিগর, অনেক আধারা পেরিয়ে, টোবযেমন খুশি সাজো। কিশোরদের জন্য লিখেছেন উপন্যাস-জুলফিকারের অভিযান, সুন্দরবনের জুলফিকার, ভুতের কবলে জুলফিকার। রম্যরচনা-অমৎসর, লঘুগুরু। তাঁর রচিত প্রবন্ধ গন্থের নাম প্রবন্ধ সংগ্রহ।
ড. মমতাজুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। ইতিহাস বিষয়ক বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রনেতা। ১৯৭৭ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। তিনি সদর উপজেলার মেঘাগাছা গ্রামে ১৯২৮ সালে জন্ম গ্রহণ করেন।
মাফরুহা চৌধুরী ১৯৩৬-এ নাটনারপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি কবি তালিন হোসনের স্ত্রী এবং প্রখ্যাত নজরুল সংগীত শিল্পী শবনাম মোস্তারীর মাতা। মুলত গল্পকার হিসাবে তিনি খ্যাত। অরণ্যগাধা ও অন্যান্য গল্প, সম্মিলিত নক্ষত্র সহ প্রায় ১০টি গ্রন্থ ২টি উপন্যাস এবং ৩টি কাব্য গ্রন্থ রচনা করেন। প্রবন্ধ গ্রন্থ-ক্রান্তিকালের ছায়া, সঙ্গ-প্রসঙ্গ, শিশুতোষ রচনা, একটি ফুলের জন্য, পানির কখনও আগুন লাগে, তাঁর ২টি বঙ্গনানুবাদ আছে।
ববিউল আলম ১৯৪৮ সালে সদর উপজেলার বারবাঘপুর জন্ম গ্রহণ করেন। নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা এবং গল্পকার। চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় বসবাস করেন। তাঁর অনেক গুলো নাটক বেতার ও টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। টেলিভিশন ও বেতারের উল্লেখ যোগ্য নাটক-নাপুস, সমাপ্তি অন্য রকম, একযেছিল দুই হুজুর, কখন সৈকতে, আর একজন রাবেয়া, প্রবাসী, সবুজিয়া, বিপ্রতিপ, আমি যখন বন্দী, এক সকালে, যার সাথে যার, উল্টোফাদ, একজন মিশার ঈদ, তোমরা-আমরা ইত্যাদি।
কিভাবে যাওয়া যায়:
বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের পশ্চিম পাশে গোকুল ইউনিয়ন পরিষদের সম্মুখে যানবাহন যোগে যাওয়া যায়এছাড়াও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- সারিয়াকান্দির পানি বন্দর
- বাবুর পুকুরের গণকবর,শাজাহানপুর
- জয়পীরের মাজার,দুপচাচিয়া
- সান্তাহার সাইলো
- দেওতা খানকা হ্ মাজার শরিফ,নন্দীগ্রাম
বগুড়া জেলার পর্যটন অঞ্চল দর্শনীয় স্থান সমূহ
Reviewed by sohel
on
09:13
Rating:
Geen opmerkings nie: