ঘরে বসেই শুরু করুন নিজের ই-কমার্স ব্যবসা (পর্ব ৪)



খুব সম্ভবত এটাই এই সিরিজের সবচেয়ে আকাংক্ষিত পোস্ট। কারন এই পোস্টে খুব গুরুত্বপূর্ণ তিনটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
  • ই-কমার্স সাইটের জন্য কি কি লাগবে?
  • আমাকে কম্পিউটারে কতখানি দক্ষ হতে হবে?
  • সব মিলিয়ে শুরুর খরচটা কত?
আপনি এই সিরিজের আগের ৩ টি পোস্ট মিস করে থাকলে প্রথম থেকে সুরু করতে পারেনঃ পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩।

ফেইসবুক নাকি ওয়েবসাইট

আপনি চাইলে ফেইসবুকে একটি পেইজ খুলে অথবা নিজের ডোমেইনে নিজের সাইট (পেইজ আর সাইট কিন্তু এক নয়) বানিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আমি আগেই বলেছি, ই-কমার্স বিজনেসে নামতে চাইলে পূর্ণ প্রস্তুতি আর মনস্থির করে নামাই ভাল। তাই আমি বলব, যদি না আপনার চিন্তা খুব ছোট পরিসরে হয়, তাহলে অবশ্যই অবশ্যই ওয়েবসাইট ভিত্তিক ই-কমার্স চালু করবেন।

ওয়েবসাইট বানাতে যা যা লাগবে

১। ডোমেইন
২। হোস্টিং
৩। প্ল্যাটফর্ম (পুরো কাস্টম নাকি সিএমএস নির্ভর?)
৪। অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে

ডোমেইন ও হোস্টিং

ডোমেইন হচ্ছে আপনার ঠিকানা। ফেসবুক ডট কম, গুগল ডট কম এগুলো হল ডোমেইনের উদাহরন। আগের পর্বে আমরা নামকরণের ব্যাপারে উল্লেখ করেছি। আপনি যেই নাম পছন্দ করেছেন (আপনার বিজনেসের নাম) সেই নামের একটা ডোমেইন কিনে ফেলুন। ডোমেইন কিনতে খরচ হবে ৭০০ থেকে ২০০০ টাকা, প্রতি বছর আবার এই পরিমান টাকা দিয়ে এটা রিনিউ করতে হবে। অনেক দেশি ও বিদেশী কোম্পানি ডোমেইন বিক্রির কাজে সাহায্য করতে পারবে। আপনি যদি .com.bd ডোমেইন কিনতে চান তাহলে অবশ্যই দেশি কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে হবে। এছাড়া name.com, godaddy.com জাতীয় বিদেশী কোম্পানিই ভাল।
এবার আসি হোস্টিং প্রসঙ্গে। আপনার সাইটটিকে কম্পিউটারে অবস্থিত একটি ফাইলের সাথে তুলনা করুন। এই ফাইলটি রাখার জন্য কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভে কিছু জায়গা দরকার। হোস্টিং আপনাকে সেই জায়গা প্রদান করে। এখানে আপনার ওয়েবসাইটের যাবতীয় ফাইল, ছবি, ডাটা জমা থাকে। এর উপর অনেকাংশে আপনার সাইটের স্পীড ও নিরাপত্তা নির্ভর করে। হোস্টিং খারাপ হলে কাস্টমাররা আপনার সাইটে ব্রাউজ করতে পারবেনা। হোস্টিং বাবদ আপনার বছর প্রতি খরচ হবে ২৫০০ থেকে ৯০০০ টাকা (আরও বেশিও আছে, কিন্তু সেটা এখন দরকার নেই)। এটাও প্রতি বছর ডোমেইনের মত রিনিউ করতে হবে। উইন্ডোজ হোস্টিং-এর চেয়ে লিনাক্স হোস্টিং ভাল হবে। কম দাম দিয়ে দেশী কোম্পানির কাছ থেকে দুর্বল হোস্টিং কেনার চেয়ে একটু টাকা খরচ করে ভাল হোস্টিং কেনা অনেক নিরাপদ। Hostmonster, godaddy বা hostgator অন্যদের থেকে ভাল সার্ভিস দিয়ে থাকে। হোস্টমন্সটার হোস্টিংএর সাথে ডোমেইন ফ্রি দিয়ে থাকে।

প্ল্যাটফর্ম

আপনি আপনার সাইটটি কি দিয়ে বানাবেন? একদম কাস্টম প্ল্যাটফর্ম বানানোর চেয়ে কোন প্রতিষ্ঠিত সিএমএস (যেমন ওয়ার্ডপ্রেস বা মাজেন্টো) ব্যাবহার করা অনেক নিরাপদ ও কম ব্যয়বহুল। এছাড়া, সিএমএস এ পরবর্তীতে সংজোজন, বিয়োজন বা হালনাগাদ করা অনেক সহজ। কাস্টম প্ল্যাটফর্ম বানানোর সময় আপনাকে খুটিনাটি সকল বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ই-কমার্স সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে এই ক্ষেত্রে অনেক কিছু বাদ পরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ও পরে পস্তাতে হয়।
কিন্তু কাস্টম প্ল্যাটফর্ম ব্যাবহার করুন বা সিএমএস ব্যবহার করুন, কাস্টম থিম (দেখতে কেমন হবে) অবশ্যই বানিয়ে নেবেন। সেই সাথে সাইটটি ফোনেও যেন ভাল দেখায় সে জন্য রেস্পন্সিভ করে নেবেন। একটি ভাল মানের রেস্পন্সিভ ই-কমার্স সাইট বানাতে ২০ থেকে ৪০ হাজার+ টাকা খরচ হতে পারে।
পেমেন্ট প্রোসেসিং গেটওয়ে
আপনি যদি চান আপনার সকল লেনদেন ক্যাশ-অন-ডেলিভারি ও মবাইল ব্যঙ্কিং এর মাধ্যমে হবে, তাহলে এর কোন দরকার নেই। কিন্তু আপনি যদি অনলাইনে কার্ডের মাদ্ধমে লেনদেনের সুবিধা দিতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই একটি দেশীও (বিদেশী গুলো কাজ করবে না) পেমেন্ট প্রোসেসিং প্লাগিং বা লাইসেন্স খরিদ করতে হবে। easypayway.com, sslcommerz.com.bd, shurjopay.com এই ধরনের সার্ভিস দেয়। সেটাপ সহ এতে খরচ হতে পারে ৬ থেকে ২০ হাজারের মত।

কম্পিউটারের দক্ষতা কতটুকু দরকার

আইটি এক্সপারট হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, তবে আপনাকে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের বেসিক ব্যবহার জানতে হবে। বাকিটা ধীরে ধীরে শিখে নেবেন। আর এই বিষয়ে একটু ঘাটাঘাটি করলে ধারণা আরও পরিষ্কার হবে (তাহলে ওয়েব ডেভেলপার আপনাকে ঠকাতে পারবে না)।

শুরুর খরচটা কেমন হবে

আপনি যদি নিজে ওয়েবসাইট বানাতে বা ডিজাইন করতে পারেন, তাহলে আপনার খরচ অর্ধেক কমে আসবে। তাছাড়া আপনি কোন হোস্টিং বা পেমেন্ট গেটওয়ে নিলেন তার উপরও কিছু খরচ নির্ভর করবে। তাও সুবিধার জন্য একটা খরচের তালিকা দেয়া হল।
ট্রেড লাইসেন্স-৩০০০ টাকা
ডোমেইন (প্রতি বছর)- ৯০০ টাকা
হোস্টিং (প্রতি বছর)- ৮০০০ টাকা
ওয়েবসাইট- ৩০০০০ টাকা
পেমেন্ট গেটওয়ে (অপশনাল)- ২০০০০ টাকা
মোট- ৬১৯০০ টাকা
(হোস্টিংএ প্রথম বছর কম টাকা লাগে, পরের বছর বেশি লাগে… গড়ে ৮০০০ ধরা হয়েছে)
একটু বুদ্ধি করে এগুলে আপনি ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে আপনার ই-কমার্স সাইটটি চালু করে ফেলতে পারবেন। এরপর শুরু হবে আপনার “ফিজিকাল এফোরট”। সেল করার মত প্রোডাক্ট কই পাবেন আর দেলিভারিই বা কিভাবে করবেন এসব নিয়ে সিরিজের পরের পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সাথেই থাকুন। আর আমাদেরকে লিখে জানান আরও কি তথ্য দিলে আপনি উপক্রিত হবেন।
সিরিজের সবগুলো আর্টিকেলঃ 
১। ই-কমার্স বিজনেস সম্পর্কে কিছু ভুল ধারনা যা আপনাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে (পর্ব ১)
২। কাস্টমার নির্বাচন, প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগে থাকা ও প্রাথমিক প্ল্যানিং (পর্ব ২)
৩। নাম নির্বাচনের কিছু বাস্তবমুখী টিপস (পর্ব ৩)
৪। সাইট বানাতে কি কি লাগবে ও শুরুর খরচ (পর্ব ৪)
৫। প্রোডাক্ট পাবেন কোত্থেকে? ডেলিভারি দেবেন কি করে? (পর্ব ৫)
৬। কিভাবে মার্কেটিং করবেন, কিভাবে সেল বাড়াবেন? (পর্ব ৬)
৭। কখন বুঝবেন “নেক্সট স্টেপ” নেয়ার সময় চলে এসেছে (পর্ব ৭)
আর্টিকেলটি ভাল লাগলে লাইক করুন, শেয়ার করুন।
ঘরে বসেই শুরু করুন নিজের ই-কমার্স ব্যবসা (পর্ব ৪) ঘরে বসেই শুরু করুন নিজের ই-কমার্স ব্যবসা (পর্ব ৪) Reviewed by sohel on 06:13 Rating: 5

Geen opmerkings nie:

Aangedryf deur Blogger.